1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

মিউচ্যুয়াল ফান্ড ‘টেনে তোলার চেষ্টা’য় বাড়ছে ঝুঁকি

  • Update Time : রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০
  • ২০৭ Time View

দেশের শেয়ারবাজারে ধুঁকতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। গত এক মাসে তালিকাভুক্ত সবকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বেড়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা কয়েকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইতোমধ্যে অভিহিত মূল্যের ওপরে উঠে এসেছে। এরপরও ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে এখনো ২৬টি অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এমন করুণ দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, ফান্ড ম্যানেজাররা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে না পারায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ভালো মুনাফা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মুনাফা করতে ব্যর্থ হলেও ফান্ড ম্যানেজাররা তাদের কমিশন নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেদিকে কোনো নজর দিচ্ছে না। উল্টো নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন মন্তব্য করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড টেলে তোলার চেষ্টা করছেন। এর ফলে কিছু বিনিয়োগকারী বিভ্রান্ত হয়ে বাছ-বিচার না করেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করছেন। যা তাদের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সার্বিক শেয়ারবাজারে ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে এবার ২৪টিই লভ্যাংশ দিতে পারেনি, এতেই বোঝা যায় ফান্ড ম্যানেজারদের পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত, যেসব মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছে না, তাদের বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি ফান্ড ম্যানেজাররা টাকা কোথায় বিনিয়োগ করছে, তাও খতিয়ে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গত ২৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সারাবিশ্বে এমনকি ভারতেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টের জায়গা। যারা ভালো বোঝেন না, তাদের জন্য সারাবিশ্বে হচ্ছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এই মুহূর্তে আমি দেখেছি আমাদের দেশে যত মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে, সবগুলোর সক্ষমতা আছে ১০-১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার এবং কেউ কেউ দিচ্ছেও। ১০-এর ওপরে তারা রিটার্ন দিচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্যের পর নভেম্বরের শুরু থেকেই একের পর এক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বাড়তে থাকে। দফায় দফায় দাম বেড়ে বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম এনএভির (প্রকৃত সম্পদ মূল্য) ওপরে চলে যায়। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর দাম বাড়ার মধ্যেই বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ পাবেন না। এতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কিছুটা দরপতন হয়।

তবে ২৩ নভেম্বর এক স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিএসইসি জানায়, ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবরের আগে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মার্জিন ঋণ চালু ছিল। তবে ২৬ অক্টোবর এক নির্দেশনার মাধ্যমে বিএসইসি তা বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আরেক নির্দেশনার মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মার্জিন ঋণের সুবিধা বহাল করা হয়। এর ফলে সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মার্জিন ঋণ চালু হয় এবং বহাল আছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই নির্দেশনা আসার পর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৬টিরই দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে মাত্র একটির। এরপরও এখনো মাত্র ১১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম অভিহিত মূল্যের ওপরে রয়েছে। বাকি ২৬টির দাম অভিহিত মূল্যের নিচে।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে বিএসইসির সাম্প্রতিক কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম টেনে তোলার চেষ্টা করছে। বিএসইসির এ ধরনের কার্যক্রম ঠিক হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত আগে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর যে সমস্যা তা খুঁজে বের করা এবং তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। সেই সঙ্গে দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু বিএসইসিকে সেই ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এখন হাওয়ার ওপর নির্ভর করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ছে। এতে সার্বিক পুঁজিবাজারে ঝুঁকি বাড়ছে।

যোগাযোগ করা হলে দেশের প্রথম প্রাইভেট অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইয়াওয়ার সায়ীদ জাগো নিউজকে বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড তার ফেসভ্যালুর ওপর নির্ভরশীল নয়, এটি নির্ভরশীল তার নিট অ্যাসেট ভ্যালুর (এনএভি) ওপর। যার নিট অ্যাসেট ভ্যালু ভালো হবে, সেই ম্যানেজার পপুলার হবে। বিনিয়োগকারীদের তাকে চিনতে, জানতে হবে। বিএসইসি বলেছেন—মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো করবে, আর সবাই হুমড়ি খেয়ে কিনে ফেলল, এটা ঠিক নয়। যারা কিনছে সবাই ভুগবে। কারণ আপনাকে দেখতে হবে, আপনার গরু দুধ দেয় কি-না?

তিনি বলেন, অনেক মিউচ্যুয়াল ফান্ড আসছে, কিন্তু লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তালিকাভুক্ত ৩৭টির মধ্যে এবার ২৪টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ দেয়নি। তার মানে তারা প্রফেশনাল (পেশাদার) নয়। বাছ-বিচার না করেই অনেক মিউচ্যুয়াল ফান্ড দেয়া হয়েছে, এখন তারা ভালো করছে না, এটাও সত্য।

এইমস অব বাংলাদেশের এমডি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে মানুষ আসে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগ আসে না। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগের জন্য। নরমাল শেয়ার যেভাবে আমরা বেচা-কেনা করে লাভ-লোকসানের হিসাব করি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড তা নয়। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মানুষকে আসতে হবে সময় নিয়ে। কিন্তু আমাদের এখানে সবাই খুব ক্ষুদ্র সময় নিয়ে আসে। আমাদের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভূমিকা না রাখতে পারার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ এটা।

ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, এই খাতটাকে পপুলার (জনপ্রিয়) করতে হবে। কিন্তু এই পপুলার করার দায়িত্ব বিএসইসির নয়। এ খাতকে পপুলার করার দায়িত্ব যারা ব্যবসা করতে আসছে তাদের। এখানে সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড একই রকম। কোনো ভেরিয়েশন নেই। এখানে ভেরিয়েশন আনতে হবে। তবেই মানুষের আগ্রহ আস্তে আস্তে বাড়ে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে আসতে হবে, স্বলমেয়াদের বিনিয়োগ দিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড কখনোই পপুলার হবে না। এ নিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন নেই।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ড অভিহিত মূল্যের নিচে থাকার কারণ আমাদের ফান্ড ম্যানেজাররা সেইভাবে পেশাদার নয়। ফান্ড ম্যানেজারদের দক্ষতার অভাব আছে। তাছাড়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম অভিহিত মূল্য দিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়। মিউচ্যুয়াল ফান্ড মূল্যায়ন করতে হবে এনএভি দিয়ে। একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম এনএভির থেকে ১০ শতাংশ কম বা বেশি হতে পারে। কিন্তু ১০ টাকা এনএভি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ১৫ টাকা হলে তা অতিমূল্যায়িত। আবার পাঁচ টাকা দাম হলে তা অবমূল্যায়িত।

এদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ভালো পারফরম্যান্স করতে না পারলেও ফান্ড ম্যানেজাররা ঠিকই মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী, ফান্ডের নিট সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক সর্বোচ্চ ২.৫ শতাংশ ফি নিতে পারবে।

এছাড়া নিট সম্পদ ২৫ কোটি টাকার মধ্যে হলে পাঁচ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ২ শতাংশ, নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ২৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ১.৫ শতাংশ এবং নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত অংশের জন্য ১ শতাংশ ফি নিতে পারবে। সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্যই এই কমিশন হার প্রযোজ্য।

এ বিষয়ে শাকিল রিজভী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো পারফরম্যান্স করতে পারুক বা না পারুক, ফান্ড ম্যানেজাররা ঠিকই কমিশন নিয়ে যাচ্ছেন। ফান্ড ম্যানেজারদের এই কমিশনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা উচিত। সবার জন্য একই হারে কমিশন নির্ধারণ না করে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে কমিশন নির্ধারণ করা উচিত।

এ বিষয়ে ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এক সময় প্রস্তাব ছিল কমিশন হওয়া উচিত পারফরম্যান্স ভিত্তিতে। অর্থাৎ যে ভালো করবে, ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে, ভালো ট্র্যাক রেকর্ড থাকবে, সেই মিউচ্যুয়াল ফান্ড ম্যানেজার বেশি কমিশন পাবে। আর যারা বছর বছর লভ্যাংশ দিতে পারবে না, তাদের ফি (কমিশন) অর্ধেক কেটে নেয়া উচিত। এটা করা গেলে ফান্ড ম্যানেজারদের দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং তাদের একটা ইনসেটিভও থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা করা হয় না।

এদিকে ফান্ড ম্যানেজাররা বিনিয়োগকারীদের টাকা ঠিকভাবে বিনিয়োগ করেন না বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইমস অব বাংলাদেশের এমডি বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব ট্রাস্টির। ট্রাস্টি যদি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তাহলে এটা হওয়ার কথা নয়। তবে যদি ট্রাস্টি ও ফান্ড ম্যানেজার গোপনে কোনো আঁতাত করে এমনটা করেন, তাহলে তো ঠেকানো মুশকিল। কারণ বাইরের লোক এটা ধরতে পারবে না। অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ উঠলে বিএসইসিকে তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং অনিয়ম পেলে কঠোর অ্যাকশন (পদক্ষেপ) নিতে হবে।

‘এই অ্যাকশন নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাছ-বিচার করা যাবে না। সবার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ একই রকম হতে হবে। যার ক্ষমতা আছে তাকে ছাড় দিতে হবে, এটা করা যাবে না। আইনের বরখেলাপকারী যেই হোক, বিএসইসির উচিত তার বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া। আর যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পারফরম্যান্স করতে পারবে না, তা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ পচা পেঁয়াজ থাকলে তা ভালো পেঁয়াজকেও নষ্ট করে দেয়। সুতরাং যারা পারছে না, তাদের বন্ধ করে দিতে হবে’—বলেন ২১ বছর ধরে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সঙ্গে জড়িত এই বিশেষজ্ঞ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..